🌸 ভ্রমণের শুরু হয় প্রস্তুতি থেকে
ভ্রমণ মানেই আনন্দ, রোমাঞ্চ, আর কিছুটা টেনশন। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন — একটা ভালো ট্রাভেল প্ল্যান অর্ধেক সফরকে আগেই সফল করে দেয়। আগে থেকে একটু গোছানো মানে ভ্রমণের সময় মাথাব্যথা কম, খরচও কম, আর অভিজ্ঞতাটা অনেক বেশি স্মরণীয় হয়ে ওঠে।
আমি নিজে এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছি, ১২টির বেশি দেশে গিয়েছি। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যারা আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়, তাদের ভ্রমণ সবসময় বেশি মসৃণ হয়। নিচে আমি খুব সহজভাবে, আমাদের মতো সাধারণ ভ্রমণকারীদের ভাষায় বলছি কীভাবে আপনি নিজের সফরটা গোছাবেন — শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।
🛫 এয়ার টিকিট: যত আগে, তত ভালো
বিদেশ যাওয়ার প্ল্যান করলে কমপক্ষে দুই মাস আগে থেকেই পরিকল্পনা শুরু করা ভালো।
দেড় মাস আগে টিকিট কনফার্ম করুন, এতে ভালো ডিসকাউন্ট বা ডিল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মনে রাখবেন, টিকিটের দাম নির্ভর করে মূলত তিনটি বিষয়ে:
- কতদিন আগে বুক করছেন
- কোন তারিখে যাচ্ছেন (সপ্তাহের দিন বা সপ্তাহান্তে)
- কোন এয়ারলাইন
সাধারণত উইকডেতে টিকিট সস্তা থাকে, উইকেন্ডে দাম একটু বেশি। তাই অফিস ছুটির দিন দেখে টিকিট বুক করুন, কিন্তু চেষ্টা করুন সপ্তাহের মাঝামাঝি ভ্রমণ শুরু করতে।
সবসময় ভালো ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে টিকিট কাটুন। নিজের কার্ড দিয়ে বিদেশি মুদ্রায় বুক করলে চার্জ বেশি পড়বে এবং আপনার কার্ডের বার্ষিক লিমিট থেকেও কমে যাবে।
🏨 হোটেল বা থাকার জায়গা বুকিং
ফ্যামিলি বা গ্রুপ ট্রিপ হলে Agoda বা Booking.com খুব ভালো অপশন।
সলো ট্রাভেলার হলে Airbnb আরও সাশ্রয়ী হতে পারে।
যেখান থেকেই বুক করুন, অবশ্যই লোকেশন, রিভিউ, আর ফ্যাসিলিটি দেখে নিন।
আমি সবসময় চেষ্টা করি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা ট্যুরিস্ট স্পটের কাছাকাছি থাকতে — এতে যাতায়াত সহজ হয়, খরচও বাঁচে।
Google Maps ব্যবহার করে আশেপাশের এলাকা দেখে নিন — কাছেই ATM, বাসস্টপ, রেস্টুরেন্ট বা সাবওয়ে আছে কিনা।
থাকার জায়গা অন্তত এক মাস আগে বুক করুন, আর ফ্রি ক্যানসেলেশন পলিসি আছে কি না, সেটা অবশ্যই দেখুন।
💳 কার্ড ও পেমেন্ট বিষয়
আজকাল dual currency prepaid card পাওয়া খুব সহজ। যেমন EBL বা অন্য কোনো ব্যাংক থেকে নিতে পারেন।
পাসপোর্ট নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে ডলার এনডোর্স করুন, তারপর কাস্টমার কেয়ার-এ ফোন দিয়ে প্রয়োজনমতো ডলার কনভার্ট ও গেটওয়ে (ATM, E-commerce, POS) ওপেন করে রাখুন।
না হলে বিদেশে গিয়ে কার্ড কাজ নাও করতে পারে।
📱 মোবাইল ও কানেক্টিভিটি
রোমিং সার্ভিস এখন খুবই সহজ।
দেশ ছাড়ার আগে আপনার অপারেটরের কাছ থেকে রোমিং প্যাকেজ কিনে নিন — এতে একি নাম্বার বিদেশেও কাজ করবে।
সবচেয়ে ভালো দিক হলো, এতে আপনি বিদেশে থেকেও Bkash বা অন্য MFS অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন।
🎟️ ট্যুরিস্ট অ্যাট্রাকশন ও এন্ট্রি ফি
আমি সাধারণত Klook.com ব্যবহার করি।
ভ্রমণের এক সপ্তাহ আগে আপনার গন্তব্য শহরের জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট জায়গাগুলোর টিকিট ডিসকাউন্টে কিনে ফেলুন। এতে গিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হবে না, আবার বিদেশি মুদ্রায় খরচও বাঁচবে।
💰 নগদ টাকা ও কারেন্সি
যেহেতু টিকিট, হোটেল আর বেশিরভাগ পেমেন্ট আগেই দিয়ে ফেলবেন, তাই বেশি ক্যাশ নেওয়ার দরকার নেই।
শুধু খাবার, স্থানীয় ট্রান্সপোর্ট আর শপিংয়ের জন্য কিছু নগদ রাখুন।
তবে একটু লোকাল কারেন্সি আগে থেকেই ভাঙিয়ে রাখলে ভালো, বিশেষ করে এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল পর্যন্ত যাওয়ার জন্য।
🧳 প্যাকিং ও প্রস্তুতি
ভ্রমণের অন্তত এক সপ্তাহ আগে বসে Google Maps দেখে নিন কীভাবে কোথায় যাবেন, কোন ট্রান্সপোর্ট সাশ্রয়ী।
রাইড শেয়ারিং ব্যবহার করতে চাইলে আগেভাগেই ওই দেশের জনপ্রিয় অ্যাপ ইনস্টল করুন।
তারপর একটা প্যাকিং লিস্ট তৈরি করুন।
গন্তব্যের আবহাওয়া দেখে পোশাক ঠিক করুন। ঠান্ডা দেশে যাচ্ছেন? তাহলে হালকা জ্যাকেট বা সোয়েটার রাখুন।
ওষুধ খান নিয়মিত? তাহলে প্রেসক্রিপশনসহ নিয়ে যান, প্রয়োজনে বিদেশে দেখাতে বা একই গ্রুপের ওষুধ কিনতে সুবিধা হবে।
আজকাল বেশিরভাগ হোটেলেই টুথপেস্ট, ব্রাশ, টাওয়েল থাকে, তাই এসব নিয়ে লাগেজ ভারী করবেন না।
আর হ্যাঁ, পোশাক এমনভাবে রাখবেন যেন সেখানে গিয়ে বারবার ধোয়ার ঝামেলা না হয়।
🛬 এয়ারপোর্ট ও যাত্রার শেষ প্রস্তুতি
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট হলে ৩ ঘণ্টা আগে, আর দেশীয় ফ্লাইট হলে ২ ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্টে পৌঁছান।
সব দরকারি কাগজের হার্ড কপি ও সফট কপি দুইটাই সঙ্গে রাখুন — টিকিট, হোটেল বুকিং, ভিসা, এন্ট্রি পাস ইত্যাদি।
ইমিগ্রেশন অফিসার কিছু জিজ্ঞাসা করলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দিন, দ্বিধা করবেন না।
আর হ্যাঁ, এয়ারপোর্টে খাবারের দাম আকাশচুম্বী — তাই আগে হালকা কিছু খেয়ে যান।
গন্তব্যে পৌঁছে ডলার ভাঙালে সাধারণত রেট কম থাকে, তাই চাইলে একটু লোকাল কারেন্সি দেশ থেকেই নিয়ে নিন।
📍 গুগল ম্যাপ ব্যবহার শিখে নিন
এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বিদেশে এমন জায়গা পাবেন, যেখানে কেউ সঠিক দিক বলতে পারবে না। তখন Google Maps-ই হবে আপনার সবচেয়ে বড় সহযাত্রী।
🌿 উপসংহার
বিদেশ ভ্রমণ মানেই কেবল ছবি তোলা নয়, এটা একটা অভিজ্ঞতা, শেখার জায়গা।
একটু প্ল্যানিং করলে, সামান্য গোছালে পুরো ভ্রমণটা হয়ে যায় অনেক সহজ, সাশ্রয়ী আর আনন্দদায়ক।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি — যত বেশি আগেভাগে প্রস্তুতি নেবেন, তত কম ঝামেলা হবে।
আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো জায়গা বা বিষয় নিয়ে জানতে চান, কমেন্টে লিখে ফেলুন — আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে জানাতে খুশি হবো।
লেখক: Md Abdul Hakim Miah (Babu)

Leave a Reply